News and Notice

গবেষক র‍্যাংকিং ও জার্নাল প্রকাশনা সংক্রান্ত কিছু তথ্য

বর্তমানে number of publications ও বিভিন্ন প্লাটফর্মে citations এর আদলে বিশ্বসেরা গবেষক হবার দেশে যেন একটা ধুম পড়েছে। কিন্তু আমরা মনে করি এগুলো ভালো গবেষকের মানদণ্ড হতে পারে না। গবেষণার মান অর্থাৎ বাস্তব জীবনে এর ইমপ্যাক্ট কতটা তা ভেবে দেখার বিষয় বটে। আমাদের দেশের বহু শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষক এখনও ভালো জার্নাল চেনে না। বিষয়টি কাউকে ছোট কিংবা বড় করার জন্য নয় বরং আমরা এটি গবেষণা ক্ষেত্রে নিজস্ব দ্বায়বদ্ধতা থেকেই লিখছি। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে যে সকল সাবজেক্ট পড়ানো হয় সে অনুযায়ী মানসম্মত  জার্নালগুলোকে রাংকিং করা উচিৎ। এতে করে অথরগন খুব সহজে তাদের আর্টিকেলের জন্য নিজস্ব ফিল্ডে মানসম্মত জার্নাল সিলেক্ট করতে পারবেন। ভালো কাজ ভালো জার্নালে পাবলিশ করা অত্যন্ত জরুরী। এতে করে number of reads বা citations নয় কাজটির সঠিক মূল্যায়নও হয়।

 

১) দেশে বহুল প্রচলিত AD scientific research টি নির্ভরযোগ্য নয়। বর্তমানে দেশে এই র‍্যাংকিং এর বিজ্ঞানী হবার একটি বিশেষ ধুম পড়েছে। এর চেয়ে scopus প্রোফাইল, elsevier ২% রাঙ্কিং, web of science ১%, কিংবা RsPEc রাঙ্কিং অনেক অর্থবহ। গুগল স্কলার এর সাইটেশন সহ scopus ও web of science এর সাইটেশন দেখুন। যদিও শেষের দুটি অথরের সমস্ত সাইটেশন শো করে না। Arts/Business ডিসিপ্লিনের গবেষকগণ ABS রাঙ্কিং ফলো করতে পারেন। অন্তত সর্বনিম্ন ABS ২ জার্নালগুলো। JCR ও SCImago (SJR) ইমপ্যাক্ট জার্নালগুলো ভালো। তবে, SJR আর JCR Impact এক নয়। SJR Scopus database ব্যবহার করে। অন্যদিকে, JCR ব্যবহার করে Web of science database. JCR, SJR এর চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য কেননা Scopus বিভিন্ন শাখায় বৃহত্তর কাভারেজ এবং প্রকাশনার একটি বৃহত্তর ডাটাবেস হলেও Web of science কঠোর মান-নিয়ন্ত্রণ এবং গবেষণার মান গভীরভাবে বিশ্লেষণের জন্য বিখ্যাত। এটি প্রতিষ্ঠিত ও উচ্চ-প্রভাব জার্নালগুলির কাজকে নির্দেশ করে, ফলে এর সাইটেশনের গুণমান ও গভীরতা অনেক বেশি। অন্যদিকে, গুগল স্কলার সকল ধরণের সাইটেশনকে প্রদর্শন করে। জার্নাল মানসম্মত হলেও করে আর মান না থাকলেও করে।

২) SCI, SSCI, AHCI জার্নাল (not even ESCI) এগুলো চেনা খুব জরুরী। Web of science এর mjl.clarivate.com থেকে sci/ssci/achi সিলেক্ট করা যায়। ESCI মানে ইমার্জিং। এ জার্নালগুলো এখনও web of science এর কোর জার্নাল না, প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। হয়ত কিছু কিছু ইতিমধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। EI ইনডেক্স জার্নালগুলি মন্দের ভালো।

৩) ইমপ্যাক্ট থাকলেই কি যে সে জার্নালে আমার ম্যানুস্ক্রিপ্ট পাবলিশ করবো? মোটেও না। কেননা আপনার নিজস্ব ফিল্ডে আপনার পাবলিকেশনটির মুল্য থাকা উচিৎ। আমি এখনও পর্যন্ত ব্রাজিলের এই https://sucupira-legado.capes.gov.br/sucupira/public/consultas/coleta/veiculoPublicacaoQualis/listaConsultaGeralPeriodicos.jsf প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করি। এতে আমার ফিল্ডে জার্নালটির কতটুকু গুরুত্ব রয়েছে তা সহজেই বুঝতে পারি। একটি জার্নাল কোন ফিল্ডে কতটুকু গুরুত্ব বহন করে তা জানা অত্যন্ত জরুরী অন্তত যখন বছর শেষে একজন গবেষককে র‍্যাংকিং করা হয়।

৪) elsevier, springer, taylor & francis, wiley, bentham science, emerald এগুলো ভাল মানের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। তবে এদের সকল জার্নাল যে ভালো মানের এমন নয়। Springer হল Springer Nature এর একটি পার্ট। তবে SN social science জার্নালগুলো হল Springer Nature এর ছাতার নিচের কিছু জার্নাল বলে বিবেচিত।

৫) দেশের বহু গবেষক এখনও মনে করেন যে মান-সম্মত প্রকাশনা করতে বহু অর্থের প্রয়োজন। এটি ভুল ধারণা। কেননা জার্নাল যদি open access হয় তবে আপনার পাবলিকেশনের জন্য অর্থের অর্থাৎ APC প্রয়োজন পড়ে। তবে কিছু open access জার্নাল প্রথম প্রথম কয়েকটি ইস্যু বের করার জন্য পাবলিকেশন ফ্রি করে দেয়। দুনিয়ায় বহু subscription-based journal রয়েছে যেগুলোতে পাবলিকেশনের জন্য কোন APC দিতে হয় না। তাছাড়া এখনও অনেক পাবলিশার রয়েছে যারা ফ্রি সহ বিশেষ ওয়েভার দিয়ে থাকে আমাদের দেশের অথরদের জন্য। যে জার্নালে ফ্রি অথবা ওপেন এক্সেস পাবলিকেশন করার সুযোগ থাকে তাকে মুলত hybrid journal বলে।   

৬) তবে এ কথা ঠিক যে সাইন্স বিভাগে গবেষণা ও পাবলিকেশন বেশি হয়। ফলে এই বিভাগে গবেষকদের প্রকাশনা ও সাইটেশনও বেশি হয়। সোশাল সাইন্স ও হিউম্যানিটিজ কিংবা আর্টস বিভাগে তুলনামূলক কম প্রকাশনা হয়ে থাকে। তাই একজন সায়েন্স বিভাগের গবেষকের সাথে এসকল বিভাগের নাম্বার অফ পাবলিকেশনস কিংবা সাইটেশন তুলনা করে গবেষকের পটেন্সি মেজার করা যাবে না। আবার সায়েন্সেও রয়েছে ফিল্ডের ব্যতিক্রম যার একটির সাথে অন্যটির পার্থক্য বিস্তর। ফলে কোন কোনটিতে বেশি গবেষণা ও সাইটেশন হয় আবার কোন কোনটিতে বেশ কম। এমনকি কিছু ফিল্ডের জার্নালের উচ্চ ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর থাকে যা অন্য ফিল্ডের সাথে মেলে না।

৭) MDPI, Frontiers, Hindawai এসব পাবলিশার গুলো শিকারি পাবলিশার বলে বিবেচিত। কেননা এদের মধ্যে বহু জার্নালে নিম্নমানের পিয়ার রিভিউ হয় যা বিশ্বাসযোগ্যতা হারানোর মত ব্যাপার বটে। এছাড়াও এদের রয়েছে দ্রুত প্রকাশনার রেকর্ড, উচ্চ মাত্রার প্রকাশনার ফি। এরা মানে কঠোরতা অর্জনের চেয়ে নাম্বার অফ ম্যানুস্ক্রিপ্ট জমা নেয়ার প্রবণতা বেশি দেখায়। তবে, সকল মানসম্মত জার্নালকে একটু ফাস্ট পাবলিকেশন করলে মন্দ হয় না। বিশেষ করে বিশ্বের বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাস্টার্স, এমফিল, পিএইচডি কিংবা পোস্টডক্টরেট ক্যান্ডিডেটদের যথাসময়ে নির্দিষ্ট মানের প্রকাশনা রেকর্ড শো করতে হয়। অন্যথায়, ডিফেন্স সহ উক্ত ডিগ্রী আঁটকে থাকে। তাছাড়া কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রোমোশন তো রয়েছেই। জার্নাল জগতে এসকল জার্নালগুলোকে ‘শিকারি’ বলে প্রচলনের পিছনে এটি একটি গুরুত্বপুর্ণ কূটনৈতিক চালও হতে পারে। কেননা, MDPI, Frontiers কিংবা Hindawai এর জার্নালগুলো দ্রুত পাবলিকেশন করায় মাস্টার্স, এমফিল, পিএইচডি কিংবা পোস্টডক্টরেট ক্যান্ডিডেট ও শিক্ষকদের সময়মত বিশেষ উপকার হয় যা অন্য জার্নালগুলো টাইমলি দিতে পারে না। আর প্রকাশনার দিক থেকে এই শ্রেণির গবেষকরাই সবসময় এগিয়ে থাকে কেননা বিশ্বে ৯৫% এরও বেশি প্রকাশনা হয় এই শ্রেণির গবেষকদের নিকট থেকে। 

 

-Muhammad Torequl Islam, PhD